দ্রুত গলছে হিমালয়ের বরফ, ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ উপত্যকার ২০০ কোটি মানুষ

অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত গলে যাচ্ছে হিমালয় পবর্তমালায় জমে থাকা বরফ। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট, বন্যা, ভূমিধসের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের বড় ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের অন্তত ২০০ কোটি মানুষ।

আজ মঙ্গলবার (২০ জুন) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই সতর্কবাণী দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের দশকের তুলনায় ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহগুলো ৬৫ শতাংশ দ্রুত গলে গেছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পাহাড়-পর্বতে জমে থাকা বরফ গলবে, এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। বরং, বরফ গলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু হিমালয়ের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে চিন্তার, তা হলো গলে যাওয়ার এই গতি। এত দ্রুত এত হিমালয় থেকে বরফ গলে যাবে, তা আশা করেননি কেউ। এ বিষয়ে এখন থেকেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

হিন্দুকুশ হিমালয়ের হিমবাহগুলো সরাসরি অন্তত ২৪ কোটি মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পানির জোগান দেয়। এছাড়া, বিভিন্ন নদী উপত্যকায় বসবাসকারী আরও অন্তত ১৬৫ কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে এই হিমবাহগুলোর ওপর নির্ভরশীল।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই শতাব্দীর শেষে হিমালয়ের হিমবাহগুলো ৮০ শতাংশ আয়তন হারাবে। তাতে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে ওই এলাকা থেকে উৎপন্ন অন্তত ১০টি প্রধান নদী ও সেগুলোর উপনদী ও শাখানদী।

গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, ইয়েলো, ইরাবতীর মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ নদীর পানির উৎস হিমালয়ের হিমবাহগুলো। সেগুলো গলে গেলে এসব নদীতে প্লাবন দেখা দেবে। তাতে নদীর উপত্যকায় বসবাসকারী বহু মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠবে। উপত্যকার বাসিন্দাদের শুধু বাসস্থান নয়, খাবার, বিদ্যুৎ প্রভৃতি একাধিক প্রাথমিক চাহিদা মেটে নদীর পানি থেকেই।

নেপালের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি)-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ২১০০ সালের মধ্যে হিমালয়ের হিমবাহের পরিমাণ দাঁড়াবে এক তৃতীয়াংশে। হিমবাহ অর্ধেক হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের তাপমাত্রা সার্বিকভাবে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণেই বিশ্বের নানা প্রান্তে আগের চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। বেড়েছে তাপপ্রবাহের মাত্রাও। এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে আবহাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //